আধিপত্যের ছায়া
নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকা। যেখানে প্রতিদিন গড়পড়তা মানুষ ঘামে ভিজিয়ে জীবন চালায়, সেখানে এক ব্যক্তির নামেই থেমে যায় সব কিছুর গতি—আহমেদ কাউসার।
কাউসার এক সময় তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু রাজনীতির ছায়ায় এসে বদলে যায় সব। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত রাজনৈতিক নেতা শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের পিএস হয়ে ওঠে সে। এখান থেকেই শুরু তার অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ার যাত্রা।
অপরাধের জগতে উত্থান:
-
চাঁদাবাজি: এলাকার দোকানদার, ট্রাক-লরি, কাঁচাবাজার—সব জায়গা থেকে মাসে মাসে মোটা অঙ্কের টাকা উঠাত।
-
জমি দখল: সরকারি জমি, রেলওয়ে জায়গা, এমনকি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিও দখল করে ফেলত।
-
মাদক ও নারী পাচার: কাউসারের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। রাতের আঁধারে নারায়ণগঞ্জ থেকে মেয়েদের ঢাকায় এবং পরে বিদেশে পাচার করত সে।
পুলিশের নীরবতা:
কাউসারের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল তার রাজনৈতিক ছত্রছায়া। পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি কিংবা সংবাদমাধ্যম—কেউই তার বিরুদ্ধে টুঁ শব্দ করত না।
ক্ষমতার সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরিণতি:
২০২4 সালের মাঝামাঝি, যখন তার অপকর্ম নিয়ে কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে প্রতিবেদন আসতে শুরু করে, তখন অনেকেই ভেবেছিল, এবার হয়তো ধরা পড়বে সে।
কিন্তু কাউসার জানতো, কোথায় থামতে হয়।
৫ আগস্টের পরদিনই গা-ঢাকা দেয় সে।
শোনা যায়, বউ ও দুই সন্তানকে নিয়ে পাড়ি জমায় মালয়েশিয়ায়।
বিদেশের সাম্রাজ্য:
বর্তমানে সে মালয়েশিয়ার সাইবারজায়া ও বুকিত বিনতাং এলাকায় বাস করে।
-
নারী সাপ্লাই এখন তার মূল ব্যবসা। বাংলাদেশ, নেপাল, ভিয়েতনাম থেকে মেয়েদের নিয়ে গিয়ে “হোস্টেল”, “সেলুন”, “স্পা”র নামে পরিচালনা করছে অবৈধ দেহব্যবসা।
-
এছাড়া বিদেশি পাসপোর্টে টাকা পাচার, বৈধতা সৃষ্টির জন্য ভুয়া কোম্পানি তৈরি—এসবই সে সামলাচ্ছে দূর থেকে।
নারায়ণগঞ্জে এখন?
তার ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী এখন স্থানীয় “ভাই” হিসেবে সক্রিয়। কাউসারের নামেই চলছে ব্যবসা, দখলবাজি, প্রভাব বিস্তার।
লোকে এখনো বলে, “ভাইয়ের ফোন আসলে থানা-পুলিশ চুপসে যায়।”
Post Comment