সশস্ত্র হামলায় ছিলেন ওসমানের পরিবারের ৫ সদস্য
নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ওসমান পরিবারের পাঁচ সদস্যের নাম সামনে এসেছে। গুলিবর্ষণের বেশ কয়েকটি ভিডিও থেকে তাদের শনাক্ত করা গেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ভিডিও ও সংবাদের তথ্য অনুযায়ী, আন্দোলনকারীদের ওপর অস্ত্র হাতে রাস্তায় গুলিবর্ষণ করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, তার শ্যালক ও বিসিবির পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, অয়ন ওসমানের শ্বশুর ও ব্যাবসায়ী ফয়েজ উদ্দিন লাভলু ও অয়ন ওসমানের শ্যালক ভিকি।
১৭ জুলাই নারায়ণগঞ্জে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর বারোটার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়ায় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। মুহুর্তেই সংঘাত পুরো শহরে ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশের সাথে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরাও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মাইকে ঘোষণা দিয়ে নিতাইগঞ্জ, মিশনপাড়াসহ আশেপাশের এলাকার সাধারণ মানুষও রাস্তায় নেমে আসে। দুপুর বারোটায় শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ গভীর রাত পর্যন্ত চলে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকলে ১৭ জুলাই বৃহস্পতিবার রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। সেই সাথে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়।
শুক্রবার পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে জুমার নামাজের পর কর্মসূচি পালনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন শিক্ষার্থীসহ সমমনা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় ছিলেননা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে আন্দোলন দমন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ পালন করতেই মাঠে নামেন শামীম ওসমান।
শুক্রবার সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া ও আশেপাশের এলাকায় সশস্ত্র অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর ডিআইটি এলাকায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নামতে পারে এমন গুঞ্জন ছিল শহরজুড়ে।
দুপুর বারেটার কিছু সময় পরে নারায়ণগঞ্জে আসেন শামীম ওসমান। শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নেতাকর্মীদের জড়ো করতে শুরু করেন শামীম ওসমান। এসময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সংগ্রহ করে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে নিয়ে আসা হয়। বিশাল এই অস্ত্র ভান্ডারের যোগানদাতা ছিলেন শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু।
জুমার নামাজের কিছুক্ষণ পরেই মুসল্লীরা বের হতে শুরু করলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব থেকে পিস্তল, শর্টগান, অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে রাস্তায় নামেন শামীম ওসমান। এসময় তার সাথে দেখা গেছে শ্যালক টিটু, ছেলে অয়ন, বেয়াই লাভলু ও তার ছেলে ভিকিকে। এসময় অস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করতে করতে ডিআইটি এলাকার দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেন তারা।
বিকেল পর্যন্ত শামীম ওসমান ও তার বাহিনীর গুলিবর্ষণের কারণে পিছু হঠতে থাকে আন্দোলনকারীরা। এসময় কয়েক হাজার রাউন্ড গুলি চালান শামীম ওসমান ও তার নেতাকর্মীরা। তবে বিকেল নাগাদ প্রায় সকলেরই গুলি ফুরিয়ে আসলে পিছু হঠতে শুরু করেন শামীম ওসমান ও তার নেতাকর্মীরা।
এদিন শামীম ওসমান, তার পরিবারের সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। ঠিক কতজন সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়েছিল এবং মারা গিয়েছিলেন তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
এদিকে মুসল্লী ও শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। শিক্ষার্থীদের সাথে আশেপাশের এলাকা থেকে সাধারণ জনতা যোগ দিলে পালিয়ে যান শামীম ওসমান। এরপর বিক্ষুব্ধ জনতা শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেয়ায় নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে হামলা, ভাংচুর চালায়।
Post Comment